ব্যবসা, ব্রান্ড, কিম্বা প্রডাক্ট এর ব্যপক পরিচিতি বা প্রাসারের জন্য অফলাইন বা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া একটা বড় রকমের কৌশল। বাংলাদেশে ফেসবুক পেজ থেকে বুষ্ট পোষ্ট তথা পেড মার্কেটিং করে অনেকেই ব্যবসা বানিজ্যে বেশ সমৃদ্ধি লাভ করে সাড়া ফেলে দিয়েছে।
Facebook পেজ থেকে (Boost Post) বুস্ট পোস্ট কি
Boost অর্থ হল উন্নতি সাধন করা বা দোর গোড়ায় নক করা । বর্তমান সময়ে অনলাইনে যতগুলো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে সবগুলো থেকে ব্যক্তিগত পেজ, কোম্পানি বা ক্লায়েন্টের পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, এবং ব্লগ ইত্যাদি ভিউ বাড়ানোর জন্য কিম্বা অনেক লোকের কাছে পৌঁছানোর জন্য যেটা করতে হবে সেটা হল অর্থ খরচ। যাকে বলা হয় পেড মার্কেটিং বা বুস্ট পোস্ট।
অনলাইন জগত তথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেকে, নিজের ব্যবসা, নিজের ঐতিহ্য, নিজ দেশ, নিজ এলাকায়, এমনকি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম উপায় । অনলাইন জগতে বিভিন্ন রকমের সোশ্যাল সাইট রয়েছে যেমন ফেসবুক (facebook), ইউটিউব (youtube) লিংকডিন (Linkedin) ইনস্টাগ্রাম (Instagram) পিন্টারেস্ট (Pinteres) সহ অনেক ধরনের সোশ্যাল সাইট বা সামাজিক মাধ্যম। এ গুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক ও ইউটিউব।
অনলাইন জগত সম্বন্ধে যাদের ভালো ধারণা রয়েছে তাদের প্রোডাক্ট বা ব্যবসা বিস্তার এবং লাভজনক করার জন্য দেশে কিংবা বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সব রকমের মানুষের কাছে প্রচার হোক এটা প্রত্যেকের মনে প্রানে চাওয়া পাওয়া । এসব লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গেলে ফ্রি মার্কেটিং এর পরিবর্তে পেড মার্কেটিং বা বুস্ট পোস্ট তথা অল্প খরচ এর মাধ্যমে টার্গেটেড অডিয়েন্স বা ট্রাফিকের কাছে পৌঁছানো।
বুস্ট পোস্ট (Boost Post) বা ফেসবুকে এডস বা বিজ্ঞাপন কেন দিবেন
ফেসবুক এলগরিদম বিভিন্ন রকমের বন্ধু, পরিবার, গ্রুপ এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য গুলোকে প্রাধান্য দেয়। সব রকমের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রি মার্কেটিঙ্গে ব্যবসায়িক পোস্ট, তথ্যউপাত্তের পোস্ট গুলোকে সবার মাঝে খুব কম উপস্থাপন করে বা তুলে ধরে। যারা পেড মার্কেটিং বা অর্থ খরচ না করে পেজ বা প্রোডাক্ট অর্গানিকভাবে প্রমোশন করে থাকে বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের পোষ্টে ভিউ, লাইক, কমেন্ট, সেয়ার,এবং সাবস্ক্রায়ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আর এই কারণেই (Boost Post) বুষ্ট পোস্ট তথা অর্থ খরচ করে প্রোডাক্ট প্রমোশনের রীতিনীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
Boost post বা বিজ্ঞাপনের (Ads) সুবিধা
Extended বা সম্প্রসারিতভাবে পৌঁছানো
অর্থ খরচ ছাড়াই মার্কেটিং করার পরিবর্তে যদি বুস্টিং তথা অর্থ খরচ করে প্রমোশন বা মার্কেটিং করা যায় তাহলে অতি সহজেই আপনার ফলোয়ার কিংবা আনফলোয়ার অডিয়েন্স এর কাছে দ্রুত পৌঁছে যাবে
টার্গেটেড বা স্থিরকৃত অডিয়েন্স
বুস্টিং এর মাধ্যমে আপনি এমন একটা সুবিধা লাভ করবেন যা আপনার লক্ষ্যকে সঠিক জায়গাতে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। যেমন ধরুন ডেমোগ্রাফিক্স বা জনসংখ্যা তাদের অবস্থান, আগ্রেহর ভিত্তিতে যাদেরকে আপনার পোস্ট সার্ভিস দেখাতে চান তা পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে দিতে পারবেন।
নির্ধারিত সময়ে কার্য সম্পাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি
বুস্টিং বা পেডমার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার পেজ, চ্যানেল, বা গ্রুপে লাইক, শেয়ার, কমেন্ট, সাবস্ক্রাইবার ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
কার্যকর খরচের মাধ্যমে প্রমোশন বা প্রচার প্রচারণ
সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন চালাতে গিয়ে যে খরচ হয়, বুস্টিংয়ের মাধ্যমে সেই প্রচার-প্রচারণা বা প্রোমোশন কম খরচে সহজভাবে সম্পূর্ণ করা যায়।
ব্র্যান্ড সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি
বুস্টিং এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট কিংবা ব্র্যান্ডের পরিচিতি আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স এর কাছে কিংবা ফলোয়ারের কাছে দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং তাদের মনের কোণে বা অন্তকরণে সর্বদা জাগরুক থাকে।
ফেসবুকে বুষ্ট পোস্ট করা কার জন্য শ্রেয় সব ধরনের পেজ, প্রোডাক্ট, ব্যবসা, নির্মাতা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেসবুকে বুষ্ট পোস্ট করা একজন মার্কেটারের জন্য আবশ্যক।
এমন কিছু প্রোডাক্ট বা সামগ্রী রয়েছে যেগুলো সময়ের সাথে সংবেদনশীল। এমনকি সময়ের মধ্যে সেগুলোকে বাস্তবায়ন না করতে পারলে বা পৌঁছাতে না পারলে আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্যের বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে যেমন প্রোডাক্ট, তথ্য-উপাথ্য কিংবা ঘটনাবলীর প্রচার-প্রচারণা।
নতুন নতুন অডিয়েন্স বা লোকদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। অডিয়েন্স বা ফলোয়ারদের ওয়েবসাইট, পৃষ্ঠা বা গ্রুপে ট্রাফিক বাড়াতে সহায়তা করে। পেড মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার পেজ বা পৃষ্ঠা, গ্রুপ, YouTube চ্যানেল গুলিতে সহজে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইবারের মত কাজগুলো বৃদ্ধি পায়।
আপনি যদি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী না হোন তবে ফেসবুকে বুষ্ট পোস্টিং আপনার প্রোডাক্ট প্রমোশনের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে।
ফেসবুকে কিভাবে একটা পোস্ট বুস্ট করা যায় তার ধারাবাহিক বিবরণ-
কোন পোস্ট বুষ্ট করবেন পূর্বে সেটা নির্বাচন করুন
যে পোস্টা বুস্ট করবেন পূর্বে সে পোস্টটি অর্গানিকভাবে দর্শকদের কাছে যৎসামান্য সাড়া ফেলেছে। পোস্টার ব্যাপারে বর্তমানে দর্শকদের কাছে মোটা মোটি চাহিদা রয়েছে, এবং এই পোস্টা বুষ্ট পোস্ট করলে আরো ভালো ফলাফল প্রদান করবে এমন একটি পোস্ট নির্বাচন করুন
আপনি যে সময় সিদ্ধান্ত নিলেন আপনার এই পোস্টটি বুষ্ট করবেন। পোস্টের নিচে ডান কর্ণারে লক্ষ্য করুন নীল বাটনে লেখা বুষ্ট পোষ্ট (Boost Post) বা প্রমোট (Promote) প্রথমে এ বাটনে ক্লিক করুন
বুষ্ট পোস্ট বাটনে ক্লিক করার পর একটি পেজ ওপেন হবে সেখানে দেখবেন ফোন নম্বর এড করুন বা ভেরিফাই করুন। এরপরে ফেসবুক আপনাকে বলবে আপনার অডিয়েন্স নির্ধারণ করুন তথা বয়স নির্ধারণ করুন এরপরে আপনি কি ধরনের অডিডেন্স কে দেখাতে চান, শুধুমাত্র পুরুষ কিংবা মহিলা সেটা নির্বাচন করুন
আপনার অডিয়েন্স কে আরো স্পেসিফিক করার জন্য আপনার যে বিষয়ের উপর পোস্ট বা প্রোডাক্ট সে বিষয়ক কিওয়ার্ড (Keywords) নির্বাচন করুন। এরপরে আপনার লোকেশন ঠিক করুন যেমন পুরো দেশ কিংবা দেশের মধ্যে কিছু এলাকা এতে করে আপনার পোস্টিং এর যে উদ্দেশ্য সেটা সহজে লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
বাজেট এবং সময়
বুষ্ট (Boost) করার জন্য প্রথমে আপনাকে বাজেট এবং সময় নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কতদিন বুস্ট করবেন এবং পার ডে কত ডলার খরচ হবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে।
ফেসবুক (Facebook) আপনার বাজেটের উপর এবং সময়ের উপরে কতগুলো অডিয়েন্স আপনার এই পোস্টটি তে এনগেজমেন্ট হবে লাইক, কমেন্ট হবে তা নির্ধারণ করে দিবে। আপনি প্রতিদিন ৫ ডলারের কম এবং সর্বনিম্ন তিন দিনের জন্য বুস্টিং শুরু করতে পারবেন। তবে উত্তম উপায় হল প্রতিদিন ৫ ডলার এবং সময় কমপক্ষে সাতদিন হলে আপনার পোস্টিং এর জন্য একটা ভালো ফলাফল আশা করতে পারা যায়
পেমেন্ট সিস্টেম (Payment Syestem) নির্ধারণ করুন
ফেসবুকে পোস্ট বুস্ট লাইভ করার পূর্বে আপনার একটি বৈধ পেমেন্ট মেথড ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বা একটি মাস্টার কার্ড থাকতে হবে। বাংলাদেশে কয়েকটি ব্যাঙ্ক এই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড গুলো প্রভাইড করে থাকে। ব্যাঙ্ক গুল হল ই বি এল (EBL Eastern Bank LTD) এ সি আই (ACI Bank) মিডল্যান্ড ব্যাঙ্ক (Midland Bank) আই বি বি এল (IBBL Islamic Bank Ltd) সি টি ব্যাঙ্ক (City Bank) অর্থ প্রদানের জন্য মাস্টার কার্ডটি সঠিকভাবে অ্যাড করে নিতে হবে। আপনার মাস্টার কার্ড অ্যাড হয়ে গেলে অর্থ প্রদানের ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়ার সাথেই আপনি পোস্ট বুষ্ট লাইভ করার জন্য বুষ্ট এ ক্লিক করুন।
আপনার এডস (Ads) রান করার পর করণীয়
আপনার এডস রান হয়ে গেলে যে ব্রাউজারে আপনার ফেসবুক একাউন্ট আছে সেই ব্রাউজারে ফেসবুক এডস ম্যানেজারে Facebook Ads Maneger অপেন করলে আপনার এডস এর ডিটেলস জানতে পারবেন। কোন লিঙ্ক থেকে এডস রান করেছেন লিঙ্কে বা সাইটে কত লাইক, সেয়ার, কমেন্ট, ইঙ্গেজমেন্ট হয়েছে। এডস রান কত তারেখে শুরু হয়েছে কত দিন চলবে। দু একদিন এডস চালার পর যদি আপনি যে কোন কারনে আর এডস চালাবেন না তবে অন (ON) অফ (OFF) বাটন পাবেন সে খান থেকে এডস অন (ON) অফ (OFF) করতে পারবেন।
উপসংহারঃ
অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে মার্কজুকারবাগের নিজের হাতের তৈরী ফেসবুক। বাংলাদেশ সহ অনেক দেশেই ফেসবুকের ব্যবাহার বহুল। লক্ষ লক্ষ ইউজার। ফেসবুক ব্যবহার কারীরা এমনি এমনি এখানে সময় দেন না। ফেসবুকের মাধ্যমে নিজেকে, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ব্যবসা ইত্যাদি বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতা নিয়ে যাচ্ছে।
GIPHY App Key not set. Please check settings