বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে অনেক ধরণের টিভি চ্যানেলর সাথে আমরা বেশ ভাল ভাবে পরিচিত। এই টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে আমরা সবধরনের খবরা খবর, এবং তথ্য উপাত্য পেয়ে থাকি। আর এই টিভি চ্যানেল যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলেই খুলতে পারে না। এর জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন, স্থানের প্রয়োজন, অনেক ধরণের সরঞ্জমাদির প্রয়োজন, যা সহজেই আয়োজন করা সম্ভব না। অপরপক্ষে বর্তমান অনলাইন যুগে এত সব কিছুর প্রয়োজন হয় না। ইউটিউব ওয়েবসাইট থেকে নিজ নামে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেল তৈরী করা খুব সহজ।
দেশের কিংবা বিদেশের যেকোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়ার জন্য বর্তমানে অনলাইন জগতটা মানুষের কাছে খুব পরিচিত। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কৃষ্টি কালচার, বা সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানার জন্য বইখাতার পাশাপাশি অনলাইন জগতে বিভিন্ন রকমের ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন গুগল (Google), ব্রেভ (Brave), বিং (Bing), ইত্যাদি তে গিয়ে যেটা জানা প্রয়োজন সেটা লিখলে তার পুরা তথ্য মুহূর্তের মধ্যে আমাদের সামনে ফুটে উঠে। এসব সাইট গুলোর মধ্যে মানুষের নিকট সবচাইতে বেশি যে সাইটটা সাড়া ফেলেছে সেটা হল ইউটিউব (YouTube)। বর্তমানে ইউটিউব একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট যেখানে ভিডিও আকারে সকল ধরনের তথ্য প্রোডাক্টের প্রচার উপস্থাপন করা যায়। এখন আমি আপনাদের উপকারের জন্য সহজভাবে সকল ধরনের তথ্য দিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল (YouTube Channel) কিভাবে তৈরি করা যায় তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরব।
একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেই ভিডিও আপলোড করা বা প্রচার করা সঠিক কাজ নয় এর জন্য কত গুলো সুনির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার। YouTube চ্যানেল তৈরি করার পূর্বে (Niche) নিস বা বিষয়বস্তু, কি বিষয়ের উপরে চ্যানেল তৈরি হবে তার প্রকৃতি নিশ্চিত করা, যেমন ধরা যাক নিসের (Niche) এর ক্ষেত্রে হলো শিক্ষা বিষয়ক (Education), বিনোদন (Entertainment), ভ্রমণ (Travel), সফটওয়ার (Software), ধর্ম বিষয়ক (Religion), এবং বিজ্ঞান (Science) বিষয়ক ইত্যাদি।
ইউটিউব চ্যানেলটি (YouTube Channel ) সঠিকভাবে সেটআপ দেওয়া
ইউটিউব চ্যানেল সঠিকভাবে সেটআপ দেওয়ার উপরে সফলতা বা বিফলতা নির্ভর করে। একটি ইউটিউব (YouTube) চ্যানেল কিভাবে সেটআপ দেয়া যায়, কাস্টমাইজ (Customize) করা যায় সে বিষয়টি ধারাবাহিক ভাবে (Step by Step) বিস্তারিত অনুধাবন করা খুব প্রয়োজন।
একটি ইউটিউব চ্যানেল (YouTube Channel) তৈরি করা প্রাথমিক প্রক্রিয়াটা খুব সহজ, এর জন্য আপনার থাকতে হবে একটি ভ্যালিড জিমেইল আইডি বা ইমেল আইডি। যখন আপনি একটা ব্রাউজার ওপেন করবেন সেটা হোক ক্রোম (Chrome), ফায়ারফক্স (Firefox), অপেরা মিনি (Opera Mini), এবং বিং (Bing) প্রত্যেকটি ব্যবহার করার জন্য প্রথমে একটি ইমেইল আইডি লাগবে।
যে কোন ব্রাউজার গিয়ে ইউটিউব (YouTube) লিখে সার্চ দিলে আপনার সামনে (YouTube.com) ওয়েবসাইটটা ওপেন হবে এরপর মাউসের কার্সারটা ইউটিউব এর উপর নিয়ে গিয়ে ক্লিক করলে সরাসরি YouTube ওয়েব সাইটে প্রবেশ করবে এবং বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখতে পাবেন। ইউটিউব সাইটের ডান কর্ণারে লগইন বাটন পাবেন। আপনি লগ ইন বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার ব্যবহৃত ইমেইল আইডিটার কারণে আপনার ইমেল আইডির আন্ডারে ইউটিউব সাইটটা চালু হয়ে যাবে। এটা আপনার প্যারেন্টস বা মূল (Parents) YouTube চ্যানেল। প্যারেন্টস ইউটিউব চ্যানেলের আন্ডারে আপনার নিশ (Niche) অনুযায়ী আরো অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন।
সহজ ভাবে ইউটিউব চ্যানেল খোলার ধাপ গুলো ইমেজের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি
সেটিনংসে আসার পর ক্রিয়েট চ্যনেল নামে একটি অপশনের উপর ক্লিক করতে হবে
ক্রিয়েট চ্যানেলে আসলে চ্যনেলের নাম চ্যানেল হ্যন্ডেল সেট করার জন্য দুটো অপশন পাবেন
চ্যনেল কাষ্টমাইযেশনে আসার পর আপনাকে প্রফাইল পিকচার, চ্যানেল আর্ট কিম্বা ব্যানার সেট সহ আরো অনেক ধরণের কাজ সমাপ্ত করতে হবে
চ্যানেলে দুটো একটা ভিডিও আপলোড করার পরে ভিও অপশনে গেলে দেখতে পাবেন চ্যানেল কিরকুম হয়েছে
একটি স্মরণীয় চ্যানেলের নাম ঠিক করুন
ইউটিউব চ্যানেল খোলার আগে এমন একটি নাম নির্বাচন করুন যেটা আপনার নিসের (Niche) সাথে সম্পর্কিত এবং যে নামটাকে মানুষ প্রতিমুহূর্তে স্মরণ করবে। এমন লম্বা কিংবা জটিল নাম নির্বাচন করা যাবে না যাতে করে মানুষ বা ভিউয়াররা সার্চ দিয়ে সহজে খুঁজে না পেলে চ্যানেল থেকে বিমুখ হয়ে যাবে এবং আগ্রহ দেখাবে না।
চ্যানেলকে চিত্তাকর্ষক বা আইক্যাচিং (Eye Catching) ব্র্যান্ডিং ডিজাইন করা
চ্যানেলের ভিজুয়াল আইডেন্টিটি বা পরিচিতি হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় যেমন ব্যানার বা চ্যানেল আর্ট লোগো এমনকি কালার কম্বিনেশন অর্থাৎ রংয়ের প্রতিফলন হবে বেশ চমকপ্রদ এই কারণে যে ভিউয়াররা যাতে চ্যানেলে আস্তে বাধ্য হয়।
নিস (Niche) তথা বিষয়বস্তু নির্বাচন করুন
একটি যথোপযুক্ত YouTube চ্যানেলের ভিত হচ্ছে নিশ (Niche) বা বিষয়বস্তু। সঠিক বিষয়বস্তু নির্বাচনের ওপরে নির্ভর করে আপনার চ্যানেলের গ্রহণযোগ্যতা, দিক নির্দেশনা, উপস্থাপনা, এবং জনপ্রিয়তা।
লক্ষ্যস্থিত বা টার্গেট (Targeted) অডিয়েন্স (Audience) সনাক্তকরণ
চ্যানেল তৈরি করার শুরুতেই একটা বিষয় অবশ্যই স্থির করতে হবে বা পর্যালোচনা করতে হবে আপনার (Niche) উপরে টার্গেট অডিয়েন্স কারা তারা কি চাই তাদের বেহাভিহার (Behaviour) কি এটা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারলে আপনার বিষয়বস্তুটা তাদের কাছে স্পষ্ট হবে এবং ইউটিউব চ্যানেলের প্রগ্রেস খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
বিষয়বস্তু নির্বাচন
প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব আগ্রহের উপর ভিত্তি করে বিষয়বস্তু নির্বাচন করে থাকেন। আপনিও নিশ্চয়ই আপনার আগ্রহের উপরেই বা আপনি যে বিষয়ে ইন্টারেস্টেড (Interested) সে বিষয়ের উপরে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার অভিপ্রায় রয়েছে। ধরা যাক খেলাধুলা, বিনোদন, ভ্রমন, বিজ্ঞান, ধর্মবিষয়ক যেকোন টপিক নিয়ে উপস্থাপনা করা আপনার বেশ আগ্রহ। এবং আপনি এটাও কামনা করেন যে আপনার এই পছন্দের বিষয়টি আরো যারা জানতে চাই তারা আপনার চ্যানেল ভিজিট করে বিষয়বস্তুগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করবে এবং তাদের মনের বাসনা মনের চাহিদা পূরণ হবে।
আপনার ভিওয়ার, সাবস্ক্রাইবার, ও ফলোয়ারদের চাহিদা গুলো খুঁজে পেতে গুগল ট্রেন্ডস (Google Trends) ইউটিউবের সার্চবারের মতো টুলগুলো সাহায্য করে।
বিষয়বস্তু নির্ধারণের কৌশল
সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নির্বাচনের কৌশল একটি জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য চ্যানেল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কি ধরনের সেবা আপনি দিবেন এবং আপনার সেবাগুলো কত দ্রুত সময়ের মধ্যে চ্যানেলে আপলোড দিবেন অডিয়েন্স (Audience) ভিউয়াররা (Viewer) সেই অপেক্ষাই থাকে। সামগ্রী বা কনটেন্ট সহজে এবং সময়সূচী ফলো করার কারণে চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তা আপনার ভিউয়ার (Viewer) এর কাছে আকাঙ্ক্ষার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়।
ধারাবাহিকতা এবং পুনঃ পুনঃ আপলোড
একটি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলের কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু আপলোডের ক্ষেত্রে নিয়ম বজায় রাখা। কনটেন্ট আপলোডের ক্ষেত্রে আপনাকে সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে আপনি কি সপ্তাহে একবার, ১৫ দিনে একবার, কিংবা মাসে একবার কনটেন্ট আপলোড দিবেন এতে করে আপনার দর্শকবৃন্দ বা ভিউয়ার গণ আস্বস্ত থাকবে। যেটা আপনার চ্যানেলকে উচ্চতায় নিয়ে যেতে বা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কনটেন্ট আপলোডের সিডিউল এবং কার্যকরী পরিকল্পনা
কয়েকটা ভিডিও একসাথে রেকর্ডিং করে সেগুলো আপলোডের জন্য সিডিউল (Schedule) করে দিলে আপনার অনেকগুলো ব্যাচ (Batch) সময় বাঁচাতে সাহায্য করবে এবং এটাও নিশ্চিত হবে আপনার ভিডিও বা কনটেন্ট প্রস্তুত রয়েছে। ক্যালেন্ডার মেনটেইন্স করলে আপনার ভিডিও আপলোডিং এর সাথে সংগঠিত এবং ট্রাকিং তথা অনুসরনকরণ (Tracking) করার জন্য মূল পরিকল্পনা।
ইউটিউব চ্যানেলটিকে কার্যকরী করে অপটিমাইজ (Optimize) করা
আপনার চ্যানেলটি যখন পুরোপুরি সেটাপ (Set up) হয়ে যাবে তখন আপনাকে আরো যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল সর্বদাই আপনার চ্যানেলটি আপনার ভিউয়ারদের জন্য এবং সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমেই পাওয়ার জন্য সঠিক পদ্ধতিতে অপটিমাইজ (Optimize) করতে হবে,এবং এ অপটিমাইজ (Optimize) কাজটা খুব গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করবে।
চ্যানেলের সাজসজ্জা বা (layout) কাস্টমাইজেশন (Customization)
ইউটিউব চ্যানেলের লেআউট কাস্টমাইজেশন এর গুরুত্ব হল, আপনার কোন ভিডিওগুলি তে বৈশিষ্ট্য(Feature) যুক্ত করতে হবে তা নির্ণয় করা। প্লে লিস্ট গুলি কে সংগঠিত বা সুন্দরভাবে সাজিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে লিংক করে চ্যানেলগুলো কাস্টমাইজ করা যাতে করে আপনার নতুন ভিউয়ারগন বিষয়বস্তু খুঁজে বের করতে উৎসাহ দেখাবে।
আপনার এবং আপনার ইউটিউব চ্যানেল সম্বন্ধে একটি বিস্তারিত বিবরণ
আপনি কে এবং কি করেন আপনার সম্বন্ধে একটা বিস্তারিত বিবরণ তথা বায়োডাটা এবং আপনার ইউটিউব চ্যানেল সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধারণা প্রদান। যাতে করে আপনার চ্যানেলের উদ্দেশ্য নতুন দর্শকরা কিংবা পরিচিতজনেরা সহজেই বুঝতে পারে। কেন তারা আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার, ভিওয়ার, এবং ফলোয়ার হবে। আপনার ইউটিউব চ্যানেল সম্বন্ধে এমন কিছু কিওয়ার্ড (Keywords) নির্বাচন করুন যার জন্য আমার চ্যানেলকে সঠিকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে সাহায্য করে।
সরঞ্জাম তথা (Equipment) সফটওয়্যার (Software) সমূহের রেকমেন্ডেশন
ভিডিওর (Video) গুণগত মান উন্নত করার জন্য আপনি কিরকুম ইকুইপমেন্ট (Equipment), সফটওয়্যার (Software), ব্যবহার করছেন সেটার উপর নির্ভর করবে। সফটওয়্যার এবং ইকুইপমেন্ট গুলো কম মূল্য এবং সহজ লভ্য হয় সেদিকে খেয়াল করতে হবে। অপর পক্ষে উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করার জন্য অধিক অর্থ খরচ করার কোন প্রয়োজন নাই।
ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও পর্যাপ্ত আলো
চ্যানেলের ভিডিওগুলোর সাউন্ড, ফটো, আলো ইত্যাদি সামঞ্জসিল করার জন্য আপনাকে ভালো মানের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, এবং পর্যাপ্ত আলো ব্যবস্থা করা। হাতের স্মার্ট ফোনটা দিয়ে একটা ভালো ভিডিও মেকিং করা সম্ভব। চ্যানেলের গুণমান বা গুরুত্ব আরো বৃদ্ধির জন্য আপনাকে ডি এস এল আর (DSLR) ক্যামেরা সহ অনেক ধরনের ইকুইপমেন্ট আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনার ভালো মানের ভিডিও মেকিং সম্ভব।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে ভিডিও পাবলিশ বা সেয়ারে অন্যতম মাধ্যমে হলো ইউটিউব, ফেসবুক, ইনষ্টাগ্রাম ইত্যাদি। এদের মাধ্যে জনপ্রিয় হল ইউটিউব। এই ইউটিউব সাইট সম্বন্ধে জানে না এরকুম ব্যক্তি আছে বলে মনে হয় না। ইউটিউবের চাহিদা দিন দিন বাড়তে আছে। ইউটিউব চ্যানেলে মানসম্মত, গ্রহনযোগ্য, এবং যুগোপযোগী চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ভিডিও কনটেন্ট পাবলিশের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ ইঙ্কাম করার একটা মাধ্যমও বটে।
,কেবলমাত্র আপনার নিজস্ব চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে যে কাজ টা করতে হবে তা হল সঠিক ভাবে সকল নিয়ম কানুন মেনে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরী এবং কাষ্টমাইজেশন করা।
GIPHY App Key not set. Please check settings